করোনা একটা রাক্ষসী, তার নামে নবজাতকের নাম না রাখার পরামর্শ স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের

ডাঃ জি বি দাসঃ আমার ডাক্তারি প্র্যাকটিস করছি চল্লিশ বছর ধরে। তার আগে ১৯৬৯ সালে ডাক্তারিতে পড়াশোনা শুরু। আমার জ্ঞান হওয়া পর্যন্ত এরকম মহামারী দেখিনি। করোনা এত ভয়ঙ্কর। আমার কাছে যেসব সন্তান সম্ভবা মায়েরা আসছেন, তাদের অনেকে জানতে চেয়েছে ডাক্তারবাবু এইসময় ছেলে বা মেয়ে হলে নবজাতকের নাম করোনা রাখা যাবে কিনা। এই লকডাউনের সময় কারও সন্তান হলে সেও এসে জানতে চাইছে নবজাতকের নাম করোনা রাখা যাবে কিনা। তাদের সকলকেই পরামর্শ দিচ্ছি, একদম নয়। করোনা একটা রাক্ষসী। আজ সবকিছু গ্রাস করছে এই করোনা। কাজেই তার নামে নবজাতকের নাম রাখার কোনও যুক্তি হয় না।

লকডাউনের এই সময়ও রোগী দেখতে হচ্ছে। কোনও মায়ের প্রসব হলো। কেও প্রসব যন্ত্রণা বা গর্ভাবস্থার কিছু সমস্যা নিয়ে আসছেন। সেসব জরুরি রোগী দেখতেই হচ্ছে। তবে আগের মতো রাতে রোগী দেখছি না। আর সপ্তাহে আগে পাঁচ দিন রোগী দেখতাম। এখন সপ্তাহে চার দিন রোগী দেখছি। সোম, বুধ, শুক্র ও শনিবার। সকালে রোগী দেখছি এগারোটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত। বিকালে তিনটা থেকে ছটা পর্যন্ত। রোগী দেখার সময় অবশ্যই করোনা সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। সতর্কতা মেনে চলতে হচ্ছে রোগীকেও। অপারেশনের সময়ও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। স্যানিটাইজার, সাবান, মাস্ক গ্লাভস, গাউন সহ সবরকম সচেতনতার ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
তবে নার্সিংহোমে চিকিৎসা কর্মী, নার্স সকলের সমস্যাতো একটু হচ্ছে। যানবাহন প্রায় নেই। তাছাড়া কোল্ড কেস যেমন যেসব অপারেশন চিকিৎসা পরে করলেও হবে তাদের সব চিকিৎসার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কষ্ট স্বীকার করেই চালাতে হচ্ছে নার্সিং হোম।
রোগীদের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধির পরামর্শ দিচ্ছি সবসময়। প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে বলছি। যেসব প্রসূতি মায়ের ছুটি দেওয়া হচ্ছে তাদের বিশেষ ভিটামিন খাওয়ার জন্য প্রেসক্রাইব করছি।
এরকম মহামারী সত্যি দেখিনি। তবে এটা অবশ্যই বলা যায়, ভারত কিন্তু ভালো অবস্থায় রয়েছে। যদিও ভালো অবস্থা বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। এ এক বিরাট যুদ্ধ। আরও বেশি করে আমাদের সচেতন হতে হবে। তবে ভারতে এখনও পর্যন্ত যা খবর করোনার গ্রোথ রেট ৬ শতাংশ। আমার মনে হয়, ভারত এই করোনা মহামারীর কবল থেকে বেরিয়ে আসবে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশ বা নিউ ইয়র্কে শুরুতে মানা হয়নি লকডাউন। ওদের দেশে অনেকে ভেবেছেন, মাই বডি মাই লাইফ। তারা সংযম মানেনি। নিজেদের ইচ্ছামতো চলাফেরা করে তারা করোনা সংক্রমণ বাড়িয়ে তুলেছে। তাদের মধ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতার অহঙ্কার দেখা দিয়েছে। ফলে হাজার হাজার লোক আজ সংক্রামিত হয়ে বিপদ বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে ভারতে মানুষ শুরু থেকেই লকডাউন মেনেছেন। ভারতীয়রা ঘরে থেকে নিজেদের সংযমের পরিচয় দিয়েছেন বা দিচ্ছেন। এর সুফল পাচ্ছে বা পাবে ভারত। ভারতীয়রা শুরু থেকে চূড়ান্তভাবে লকডাউন উপেক্ষা করলে আজ বিরাট মৃত্যুমিছিল দেখা যেতো ভারতে।তারপর ভারতে যা লোকসংখ্যা এবং জনঘনত্ব। ভাবা যায় না। তখন কে কার চিকিৎসা করতো? এখনও সরকারি নির্দেশিকা মেনে ভারতীয়রা আরও কিছুদিন সংযমের পরিচয় দিলে তার বিরাট সুফল পাবে ভারতই।
( ডাঃ জি বি দাস খবরের ঘন্টার উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য। তিনি উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। শিলিগুড়ি আশ্রমপাড়ার পাকুড়তলা মোড়ে অবস্থিত নিউ রামকৃষ্ণ সেবা সদনের তিনি একজন কর্ণধার।)