ঘোষিকা হিসাবে উঠে আসতে লড়াই চলছে অনামিকার

শিল্পী পালিত ঃঃ আজ আমাদের খবরের ঘন্টার আত্মকথা বিভাগে অনামিকা বনিক তার কথা মেলে ধরেছেন–

সুস্থ ,স্বাভাবিক ও সচ্ছল পরিবারের শিশুদের মতো আমারও শৈশব ও কৈশোর জীবন ছিল খুব স্বাভাবিক ও বিভিন্ন রঙে ভরা। এককথায় রঙিন। বাবা খুব পরিশ্রমী, সৎ ও প্রচন্ড তার অধ্যাবসায়। আমি ও আমার দাদা তখন তিনি দুই সন্তানের পিতা হয়েও তিনি প্রচন্ড অধ্যাবসায়ের জোরে R.M.P পরীক্ষায় টপার হয়েছিলেন। যেহেতু কোনো কারণবশত উনি M.B.B.S করতে পারেননি, সেকারণে উনি Registered Medical practitioners হিসাবে বিনা পয়সায় নিঃস্বার্থভাবে গরীব বা দুঃস্থ রোগীদের চিকিৎসা করতেন । নিজের অর্থে ঔষধ কিনে দুঃস্থ রোগীদের তিনি বিনামূল্যে ঔষধপত্র দান করতেন। টপার হওয়ার সম্মাননা উনি আমাদের সকলের সাথে গিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। মাও দুঃস্থ শিশুদের বিশেষ যত্নের সঙ্গে আমাদের সাথেই পড়াতেন।শুধু পড়া নয় তাদের টিফিন এমনকি খাবারের আয়োজন থাকতো আমাদের সাথে। অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট টিউশন যদিও কখনো পছন্দ করতেন না উনি। ছোটবড়ো ভেদাভেদ ভুলে সকলের সাথে আমার বড় হওয়া।
বিয়ের পর স্বামী শ্বশুরও পেয়েছি খুবই উদার মানসিকতার । কিন্তু তার কুফল কিছুদিনের মধ্যেই সামনে চলে আসে ।শ্বশুর মশাই ছিলেন উচ্চপদস্থ রাজ্যসরকারী কর্মচারী ।স্বামী নিজের ব্যবসায়িক আর্থিক সঙ্গতি ঠিক রাখতে না পারায় স্বামীর ভিটেমাটি ছাড়া হতে হয় আমাকে । যদিও এটা কোনোভাবে দমাতে পারেনি আমার দৃঢ় মানসিকতাকে জীবন মানুষের জন্য, আছি বেঁচে সংগ্রামে । সংগ্রাম আছে তাই জীবন্ত অনুভব করি ।ছোটবেলায় আমার গান শেখা ।রবীন্দ্র সংগীতে চতুর্থ বর্ষ অতিক্রম করে আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি । তবে কথা বলতে ভালোবাসতাম, এটাই এখন পেশা ও ভালোবাসাতো বটেই ।ঘোষক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছি । ওয়ার্ড নং 41 এর ওয়ার্ড উৎসব , ফুলমেলা, ট্রেডফেয়ার এমনকি লেক্সপো মেলামঞ্চেও বহুবার সঞ্চালনার সুযোগ পেয়েছি ।আয়োজক সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ।কথা ভালো লাগে তাই আবৃত্তি করাটাও আত্মতৃপ্তি দেয় । আবৃত্তি নিজের মতো করে মঞ্চে পরিবেশন করি ।স্থানীয় উত্তর কাকলি সাংস্কৃতিক মঞ্চেও বহুবার আবৃত্তি করে প্রশংসা ও পরিচিতি লাভ করেছি । শিলিগুড়ি শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সোসাইটির সান্নিধ্যে থাকায় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব , স্বামী বিবেকানন্দ ও করুণাময়ী মা সারদার কৃপাদৃষ্টি আমার মনের শান্তির জায়গা ।
পড়াশুনায় খুব মেধাবী না হলেও সাধারণ মেয়ে হিসেবে কখনও পিছিয়ে থাকিনি ।মায়ের অনুশাসন ও বাবার মানবিক শিক্ষা জানিনা মানুষ হিসেবে কতটা তৈরি করতে পেরেছে , তবে অমানবিক আচার আচরণ আজও মনকে কষ্ট দেয় ও প্রতিবাদী করে তোলে । শিল্পী পালিত দিদি ও বাপী ঘোষ মহাশয়কে দু একবার সামনা সামনি কাছে থেকে দেখে খুবই সৎ মানবিক ও মাটির মানুষ বলে মনে হয়েছে । ওনাদের জন্য শ্রদ্ধা ভালবাসা ও কুর্নিশ । দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক ওনাদের মতো মানবিকতা । এই কামনায় আমি অনামিকা বণিক (দাস) । পিতা- বিনয় কূমার বনিক। মাতা- মলয়া বনিক। স্বামী- সুমিত কুমার দাস